(সর্বহারার রাজনীতি বাঙালিকে চিরকাল আকর্ষণ করলেও
সেই “ক্ষুদিরাম হবে পাশের বাড়ির ছেলে” মনোভাব থেকে
পারেনি বেরোতে। সত্যি বলতে কী এই ঘরকুনো জাতির
জেগে ওঠার যত গল্প আছে সেসব শুনলে ভাবাও যায়না যে
বাঁধ ভাঙ্গার মতো এত সাহস আমাদের ছিল। এবার অভিজ্ঞ
সাংবাদিকের কলমে উঠে এল তার বর্ণনা। এই ধারাবাহিক
এক অন্যরকম দৃষ্টিতে জীবনের কথা, মানুষের কথা।)
– সব্যসাচী সরকার
মাঝে মেলা দিন লোক দেখার কাহিনী লিখিনি। নানা হ্যাচোড়প্যাঁচোড়ে
জড়িয়ে ছিলাম। বয়স বাড়লে জীবনের চারপাশে নানা প্যাঁচ ঘিরে
ধরে। অনেক শুঁড়। একটা ছাড়লে,অন্যটা ধরে। বুঝি,কিন্তু বুঝেও
পিত্যেশ নিয়ে বসে আছি। হা-হতোস্মি পেয়েছি অনেক!
যেমন যতীন কন্ডাকটর। ছয় মাসে ছটা বাসের চাকরি ছেড়েছে। সব
মালিকের জন্য, এমন না। ইচ্ছে। দূর ,কী লাভ বলেই চলে এসেছে।
তারপর, দু চারদিন ঘুরঘুর। আবার বাসের হাতল। উল্টোডাঙ্গা, বাঙ্গুর,
কেষ্টপুর, কৈখালি, সিটখালিইইই ! এক স্কুলপড়ুয়া মোক্ষম প্রশ্ন
করেছিল, “তুমি রোজ সিটখালি বলো, আজ ওই স্টপেজেই নামবো!”।
যতীনের জীবন অন্যরকম। সে গান শোনে। রাগ কম। ভাতে ঝোল
বেশি খায়। টকডালে একষ্ট্রা লেবু চটকায়। তবে,ঘাড়ে পাউডার দেয় না।
বলে, “ফুটানি মেরে কী লাভ!”। যতীন বড় শোলমাছ পোড়া খেতে
ভালবাসে যতীনের বাসে ছোট ছোট পড়ুয়ারা বেশি ওঠে। রুটেই পড়ে।
ধমক দেয়। হাত বাইরে নয়। স্টপেজে নামিয়ে দেয়। বাস ফাঁকা হলে
বিড়ি ধরায়। টাকা পয়সা গোনে। যাত্রী কম হলে বলে সিজনের দোষ।
যতীনের একটা বড় স্বপ্ন আছে। নিজেই বাস কিনবে। স্কুলবাস। পড়ুয়াদের
নিয়ে যাবে। ওদের নানা আলোচনা শুনবে। কত কী কথা বলে…
যতীনের দুঃখ ওই রকম ড্রেস পরে এ লাইফে স্কুলে যাওয়া হয়নি।
স্কুলবাসের মালিক হবে একদিন আর রোজ স্বপ্নের যাতায়াত দেখবে…
(চলবে…)