রবীন্দ্র ভাবধারা, বাঙ্গালীর আবেগের দুই শব্দ শান্তিনিকেতন , বিশ্বভারতী । সে আবেগে মাঝে মধ্যেই বেগ নেমে আসে। রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শ যে ইতিমধ্যেই খুন হয়েছে তা স্বীকার করতে ক্ষতি কি? গেল গেল করার আগে আরো একবার অন্য ভাবে ভেবে দেখলে হয় না!
সেই ভাবনা ভাবতেই শ্রোতার কলম। আজ প্রথম পর্ব।
শান্তিনিকেতন বললেই অধিকাংশ বাঙালি ভক্তি গদগদ হয়ে পড়েন এবং শান্তিনিকেতনে যে
বিশ্বভারতী নামক একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় আছে ও তা পরিচালনের একটি নিজস্ব ছন্দ
আছে, তা ভুলে থাকার চেষ্টা করেন।
ফলে বিশ্বভারতীর তিলেক বিচ্যুতিতে ‘সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেল রে’ বলে মধ্যবিত্ত
বাঙালির কেঁদে আকুল হলেও তাতে প্রাশসনিক চিঁড়ের সিকি ভাগও ভেজে না।
বাঙালি আর কত দিন রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন নামক আবেগের ঠুলি এঁটে
রবীন্দ্রনাথকে পূজার ছলে ভুলে থাকবে সে প্রশ্নের থেকেও আরও একটা বিষয় উপলব্ধি
করা সবিশেষ জরুরি, তা হল, বিশ্বভারতী এবং শান্তিনিকেতন বহুদিন ধরেই দুই ভিন্ন
অস্তিত্বের অধিকারী।
শান্তিনিকেতন মানেই বসন্তোৎসবে সুন্দরীদের সমাবেশ নয়। কোপাইয়ের মনোলোভা
সূর্যাস্ত নয় বা পৌষমেলায় বাউলের আখড়ায় নিজেকে ফোক-প্রেমী প্রমাণের সহজ ও
উৎকৃষ্টতম স্থান নয়।
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের হাতে গরম উদাহরণ ও বিকল্প যাপনের
ভিত্তিভূমি তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই কষ্টসাধ্য দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার থেকে আপামর
হুজুগে বাঙালি কাঁথা স্টিচের শাড়ি, পাঞ্জাবির দাম জাহিরে নিজেদের সাংস্কৃতিক প্রমাণ করেন।
এই জায়গাতেই ধূর্ত রাজনীতির কাছে বার বার পরাজিত হয় বাঙালির আবেগ সর্বস্ব
রবীন্দ্রপূজা। বর্তমান শিক্ষানীতি যে গুরুকূলের প্রসারে জান লড়িয়েছে, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ
তার পক্ষে মূর্তিমান ত্রাস! কারণ তা প্রশ্ন করতে শেখায়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে শেখায়।
যা বর্তমান রাজনৈতিক ভাবধারার বিপ্রতীপে অবস্থান করে। এই দড়ি টানাটানিতে
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বেসর্বা সামান্য বোড়ে। তাঁকে যেমনি নাচানো হয় তিনি তেমনি নাচেন।
তাতে সাপও মরে লাঠিও ভাঙে না।
ত্রাস সৃষ্টি সার্থক, ক্ষমতার আস্ফালনও প্রচারিত। সাধারণের করের টাকা ধ্বংস করে
উচ্চাশা পূরণের জন্য রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শকে খুন করা সামান্য ঘটনা। কোল্যাটারাল ড্যামেজ।
এই সংঘাত কিন্তু সাধারণ নয়। ও সংঘাত আদর্শ বনাম চাপিয়ে দেওয়া
আধিপত্যবাদের। সে লড়াই শুধু আবেগ দিয়ে লড়া যায় না।
(চলবে)