কুম্ভ! পূর্ণ , অর্ধ, অনু ! তা সে যাই হোক না কেন। বেশ কয়েকদিনের আবেগ ,
উচ্ছ্বাস আজ প্রেম দিবসেই শেষ- এই বাংলার ত্রিবেনীতে।
কিন্তু বসন্তের শুরুতেই সাধু সঙ্গে বাংলায় প্রেমের প্রসার হলো কি ? পেলাম কি
অমৃতের সন্ধান?
প্রচার অপপ্রচার, ক্ষেপ আক্ষেপ মিলিয়ে মিশিয়ে বাশবেড়িয়ার ত্রিবেণী নদী
সঙ্গমে সাধুদের জ্বালানো ধুনির ধোঁয়া আগামী বছর অবধি হুগলীর বাতাসে মিশে
থাকবে তা নিশ্চিত।
দ্বিতীয় বারের কুম্ভ শুরুর আগে থেকেই বিতর্ক চাবুকের মতো পড়েছে, পড়ছে ধর্ম পরিচালকদের ওপর।
প্রচার – অপপ্রচার এর পাশাপাশি বিভাজনের রাজনীতি বাংলার ও বাঙ্গালীর
একমাত্র ঋনাত্মক মূলধন তা আর জানতে বাকি নেই তামাম দুনিয়ার বাংলা প্রেমীদের।
স্বামী বিবেকানন্দের বিলেত ফেরতের পর তাঁকে নিয়ে চর্চা কিম্বা আজকের
বাংলায় কুম্ভের পৌরহিত্য করে,
বাংলার গৌরব কৃষ্টি সংস্কৃতির কথা ছড়ানোর চেষ্টা করা পঞ্চায়েতি আখাড়ার
মহামন্ডলেশ্বর পরমহংস পরমাত্মানন্দের উদাহরনেই স্পষ্ট।
কুম্ভ অর্থে অমৃত কুম্ভ। যে কুম্ভে ডুব দিলে মেলে অমৃতের সন্ধান। কি সেই
অমৃত! সাধুর কাছে চরম আধ্যাত্ম লাভ।
সাধারনের কাছে মুক্তির পথ, ঈশ্বরের সানিধ্য, সুষ্ঠ পথে জীবন
অতিবাহিত করা ছাড়াও – সনাতন ধর্মে এই ধৌত বিধি শুদ্ধ চিত্তের নিদান!
ওই যে এলিট বাংলা ও বুদ্ধিজীবি বাঙ্গালীর ইগো আর বিভাজনের
যুক্তিরকাছে হার মানে শিকড়ের সন্ধান, ধর্মীয় ভাবাবেগ
আর বিশ্বাসের মনোরথ ।
কোথায় তখন স্বামীজি আর কোথায় ……………।
ত্রিবেণীতে কয়েক লক্ষ পূণ্যার্থী এলেন গতবারের তুলনায়। হ্যা হয়তো বেশ কিছু
ভন্ড সাধু খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন বর মিডিয়ার বড় সাংবাদিকরা।
তবু কুম্ভ হল। অণু কুম্ভ।
বাংলার ইতিহাস , কৃষ্টি , আবেগ এর পাশাপাশি সনাতন ধর্মের রীতি নীতির সঙ্গে
পরিচয় করানোটা আরো একবার দরকার ছিলো বই কি!
রীতি অনুযায়ী কোনো আখাড়ার মহামণ্ডলেশ্বরই কুম্ভের পৌরহিত্য করে থাকেন।
এবছর বাংলার কুম্ভের পৌরহিত্য করলেন পঞ্চায়েতি আখাড়ার মহামন্ডলেশ্বর
পরমাত্মানন্দজি।
মহারাজের কথায় – ত্রিবেণীতে যে কুম্ভের সন্ধান মিলেছে তা মহাভারত সহ
বহু প্রামান্য ঐতিহাসিক দলিলে লিপিবদ্ধ। এবং তা ৭০০ বছর আগের।
সোমবার হলো শাহি স্নান।
রীতি মেনে মহামণ্ডলেশ্বর ও অন্যান্য সাধু সন্তদের নিয়ে এক শোভাযাত্রা
পরিক্রমা করলো গোটা ত্রিবেণী। তারপর মহামন্ডলেশ্বরের ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব
দিয়ে শুরু হল স্নান পর্ব।
বাঁশবেড়িয়া ত্রিবেনীতে না হয় কুম্ভ হল ।
কিন্তু নদীর ওপারে কল্যানীতেও আরো এক কুম্ভের ব্যবস্থা করে ফেললেন
গতবারের কমিটিতে থাকা মানুষজন।
আর সুবিধা মতো বাজারি মিডিয়া সরকারকে
প্রশ্ন করার ভয়ে ” শিল্পের বদলে ধম্ম” এমন খবরে বাহবা কিনলেন।
নিন্দুকেরা যে যাই বলুন না কেন , বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি আর ইতিহাস
নতুন প্রজন্মের সামনে আরো একবার তুলে ধরার সাহস যে সাধুরা দেখালেন
তা শুধু ধর্মীয় ভাবা বেগে নয় ইতিহাসের প্রামান্য দলিল হিসেবেই দেখা উচিত।